সেভেন সিস্টার্সে ইন্টারনেট সরবরাহের প্রস্তাব বাতিল করেছে বিটিআরসি

বাংলাদেশকে ট্রানজিট করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য অর্থাৎ সেভেন সিস্টার্সে ব্যান্ডউইথ নেওয়ার প্রস্তাব ‘না’ করে দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। দেশের দুই ইন্টারন্যাশনাল টেলিস্ট্রেরিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন্স এবং ফাইবার এট হোম ভারতের টেলিকম অপারেটর ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছিল। বিগত সরকারের সময় অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে বিটিআরসি এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি।

gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এরশাদ উল বারী ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে আবেদনটি ছিল সেটি আমরা না করে দিয়েছি। কারণ বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন ও বিধি অনুযায়ী তাদের এই প্রস্তাবে সায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো চিঠিও আমরা বাতিল করে দিয়েছি।’

এর আগে বিগত সরকারের সময় ভারতী এয়ারটেল এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি টেলিযোগাযোগ বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে পাঠায়। টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে বিটিআরসিকে পাঠানো হয়েছিল। এবার বিটিআরসি এই সিদ্ধান্তে সরাসরি না করে দিয়েছে। একই সঙ্গে ট্রানজিটের অনুমতি দেওয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো চিঠিও বাতিল করেছে বিটিআরসি।

যেভাবে এই ট্রানজিটের পরিকল্পনা ছিল : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয় সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত। এই সেভেন সিস্টার্সে দ্রুত গতির ইন্টারনেট দিতে ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) সেবা চালুর এই উদ্যোগ। যার ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার হবে। সামিট, ফাইবার এট হোম ও ভারতী এয়ারটেলের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া এবং ভারতের আগরতলার নোম্যানস ল্যান্ডে আন্তঃসংযোগ পয়েন্টের মাধ্যমে এই সংযোগ হওয়ার কথা ছিল। সামিট ও ফাইবার এট হোম আখাউড়া সীমান্তে টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন (টিসিএলএস) স্থাপন করত। এরপর এই টিসিএলএস হতে ফাইবারের মাধ্যমে কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডি স্টেশনে সংযোগ দেওয়া হতো। যার মাধ্যমে এই আইপিএলসি সেবা সিংগাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতো।

ভারতের সেভেন সিস্টার্স থেকে চেন্নাই সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশনের দূরত্ব ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। বর্তমান নেটওয়ার্কে ভারতের সিংগাপুর পর্যন্ত দূরত্ব ৮ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। সেভেন সিস্টার্সের পথের এলাকা দুর্গম পার্বত্য হওয়ায় ফাইবার নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি ও নেটওয়ার্ক ঠিক রাখা বেশ কঠিন। আর দীর্ঘ দূরত্বের কারণে ল্যাটেন্সি হয় ৫৫ মিলিসেকেন্ড, এটি সিংগাপুর পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় ৮৭ মিলিসেকেন্ড। বাড়ে খরচও। ফলে মানসম্মত সেবা দেওয়া চ্যালেঞ্জিং। অন্যদিকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এই ট্রানজিট নেটওয়ার্কের কারণে দূরত্ব কমে যাবে ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার আর সিংগাপুর পর্যন্ত ল্যাটেন্সি কমে যাবে ৩৭ মিলিসেকেন্ড।

যেসব যুক্তিতে না করেছে বিটিআরসির : বিটিআরসির একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রানজিটের কারণে আঞ্চলিক হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হবে এবং ভারত এখানে শক্তিশালী হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা বলছে, আইপিএলসি ট্রানজিট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রাথমিক কোনো আলোচনাও হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এর যৌক্তিকতা, আইনি ও বাণিজ্যিক বাস্তবতা, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষপট ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া গুগল, আকামাই, অ্যামাজন, মেটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এজড পপ ভারতের কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ে হওয়ায় আইপিএলসি ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারতের টেলিকম অপারেটরগুলো সেভেন সিস্টার্সে সহজে ও গতিময় ইন্টারনেট দিতে পারবে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে এজড পপ ও ডেটা সেন্টার করে সেভেন সিস্টার্স, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মিয়ানমারে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি-ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলবে। তারা চাইলে বাংলাদেশ থেকেও এই সুযোগ নিতে পারে। সামিট কিংবা ফাইবার এট হোম ট্রানজিট ক্যাবল দিয়ে যেটা করতে চেয়েছিল সেটা অবৈধ ছিল।

আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম ইত্তেফাককে বলেন, ‘এই ট্রানজিটে বাংলাদেশের কোনো লাভ হতো না। লাভবান হতো দুই আইটিসি অপারেটর। তারা কৌশলে এমন একটি আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে যেত যেখানে আইটিসি হিসেবে ভারত হতে ব্যান্ডউইথ কেনা এবং এই ট্রানজিটের চার্জ নিয়ে কোনো লেনদেন হতো না। ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাত।’

ইত্তেফাক/এমএএম

Check Also

হঠাৎ পদত্যাগের হিড়িক, একসাথে ৮ সদস্যের পদত্যাগ!

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটি গঠনের পর বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। ঘোষণার ২৪ …

Leave a Reply