Breaking News

ভারতের সাথে ছিল গোপন চুক্তি, সব ফাঁস.. বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে একতরফা ট্রানজিট পায় ভারত!

চিলাহাটি-পার্বতীপুর-সান্তাহার-দর্শনা রুটে ভারতকে একতরফাভাবে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। বলছেন, গেলো জুনে শেখ হাসিনার ভারত সফরে সই হওয়া দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারকে দেখা হয়নি উত্তরের জনপদের নিরাপত্তা আর দেশের স্বার্থ। তাই চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সঙ্গে দর কষাকষি অথবা পুনর্বিবেচনার উত্তরাঞ্চলের মানুষের।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের দামামা না বাজলে চিলাহাটির এ রেলপথে জুলাই মাসেই ঘুরতো ভারতের মালবাহী ট্রেনের চাকা।

চলতি বছরের জুনে তৎকালীন সরকার প্রধান ভারত সফরে গিয়ে সই করে করেছেন তেমনই একটি সমঝোতা স্মারক। যার মাধ্যমে ক্ষমতা হারানোর আগে ভারতকে রেল ট্রানজিট দেবার বন্দোবস্ত প্রায় পাকাপোক্ত করেছিলেন শেখ হাসিনা।

ভারতকে দেয়া ট্রানজিট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা থাকলেও কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই সে সমঝোতায় সই করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

২২ জুন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়েত্রার বরাতে ভারতসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছিল জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার শুরু করতে চায় ভারত। যদিও অতি গোপনীয়তায় সই হওয়া এ চুক্তির বিস্তারিত জানাতে অপারগতা জানিয়েছিল চুক্তি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ চুক্তির আওতায় ভারতের মালবাহী ট্রেন পশ্চিমবঙ্গের গেদে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করবে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গায়। এরপর দর্শনা রেল স্টেশন থেকে পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরের আব্দুলপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে ট্রেন যাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ী স্টেশনে।

সেখান থেকে রেললাইনটি যাবে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত। এই রেল ট্রানজিটের বেশিরভাগ পথই উত্তরের জেলা নাটোর, দিনাজপুর ও নীলফামারির তারপরও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দেখা হয়নি এ অঞ্চলের মানুষের স্বার্থ, করা হয়নি কোনো পরামর্শক কমিটি।

জনমত যাচাই ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থ পরিপন্থি বলছেন, বলছেন উত্তর জনপদের সচেতন নাগরিকরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক রংপুর মহানগরের সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘আজ থেকে প্রায় ৮০-৮৫ বছর আগে যে রেললাইন হয়েছে সেটির ওপর দিয়ে এত ভারি যান যাওয়ার ক্ষমতা আছে কি না আমাদের সে বিষয়গুলো এবং আমাদের রেভিনিউ কেমন আসবে, যাওয়ার জন্য যে ট্রানজিট লাগবে সেগুলো কি শুধু পণ্য পরিবহনের জন্য হবে সেগুলোও দেখতে হবে।’

ট্রানজিট চালু করতে অবকাঠামো উন্নয়ন, চুক্তি শর্ত, শুল্ক, অর্থায়ন কিংবা অন্য কোনও বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি বাংলাদেশ বা ভারতের পক্ষ থেকে।

রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দর্শনা-চিলাহাটি রেলপথ বেশ পুরোনো তবুও এ পথে ইতোমধ্যে ছয়টি সেকশনের মধ্যে তিনটি ওভারলোডেড।

এছাড়া আব্দুলপুর-সান্তাহার ও সান্তাহার-পার্বতীপুর সেকশনে সক্ষমতার অতিরিক্ত ১৪টি ট্রেন চলছে। বাড়তি ট্রেন চলছে পার্বতীপুর-চিলাহাটি সেকশনেও। এ অবস্থায় ভারতের সঙ্গে রেল ট্রানজিট চুক্তিতে কতটা লাভবান হবে বাংলাদেশ?

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, ‘আমরা এটা থেকে খুব বেশি বেনিফিটেড হওয়ার সুযোগ নেই। একটা সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাই। সেটা হচ্ছে বার্গেইনিং টুল হিসেবে আমরা এটা ব্যবহার করতে পারি। এর মাধ্যমে নন-ট্যারিফ যে ব্যারিয়ার, সীমান্ত সমস্যা, পানি চুক্তি এ বিষয়গুলো যদি আমরা আদায় করে নিতে পারি। তাহলে বোথ সাইড বেনিফিটেড হওয়ার একটা সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাই।’

দেশে ব্রডগেজ রেলপথে ভারবহনের ক্ষমতা ওয়াগন প্রতি ২২ দশমিক ৫ টন, বিপরীতে ভারতের রেলপথ বহন করে ওয়াগন প্রতি ২২ দশমিক ৮২ টন। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর হয়ে নীলফামারীর চিলাহাটি পর্যন্ত রেলপথের বেশির ভাগ অংশই বেশ পুরোনো, যে কারণে ভারবহনের ক্ষমতাও কম।

এমন বাস্তবতায় ভারতীয় মালবাহী ট্রেন নিয়মিত চলাচল শুরু করলে বাংলাদেশের অংশের এই রেলপথ কতটা ভার বহন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন তো আছেই, সঙ্গে উঠেছে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার বিষয়টিও।

শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ত্বাহা হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যখন একটা ট্রান্স শিপমেন্ট যাবে, ইকুইপমেন্টটা যাবে স্বভাবতই ওইসব বিচ্ছিন্নতাবাদী জনগোষ্ঠীর যারা সদস্য তারা কিন্তু বাই ডিফল্ট বাংলাদেশকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করা শুরু করবে। সেটা যদি হয় তাহলে বাংলাদেশ এই অহেতুক ঝুঁকি নিবে কি না।’

বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে ভারতের সেভেন সিস্টারস রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনে দূরত্ব কমবে ৩’শ কিলোমিটার। তাই রেল ট্রানজিটের সুবিধা একমুখী না হয়ে যেন পারস্পরিক হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে দর কষাকষিতে নতজানু না হয়ে চুক্তি পুনর্বিবেচনার পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের।

Check Also

১৫৮ জন সমন্বয়কের ঠিকানা সংগ্রহ শুরু হয়েছে, ‘একটিও পালাতে দেওয়া হবে না’

নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এর নামের এক ফেসবুক পেইজে সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কের …

Leave a Reply