রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় সবাই অবজ্ঞা করত, সেই সৌরভ চান্স পেলেন ঢাবিসহ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে

আহম্মেদ সৌরভ। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন। তিনি ঢাবি ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ১৩৩তম স্থান অর্জন করেছেন। এ ছাড়া, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩তম, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০৩তম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬৭ তম ও গুচ্ছে ১৫তম স্থান অর্জন করেছেন। ভর্তি পরীক্ষায় নিজের সাফল্য, সংগ্রাম নতুন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু টিপস নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—তাহমিনা আক্তার।

৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে আপনার অনুভূতি কী?
আলহামদুলিল্লাহ। আমি আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ যে আমাকে আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ দিয়েছেন।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কোন বিষয়ে ভর্তি হয়েছেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হয়েছি। ব্যবসায় বাজার কীভাবে চলে, কোন প্রোডাক্ট সামনে ভালো করবে— এইসব কিছু নিয়ে রিসার্চ করতে চাই। ভবিষ্যতে নিজে একটি কোম্পানি দিতে চাই। তাই আমি মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
কলেজে প্রথম বর্ষ থেকেই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি। টেক্সট বইয়ের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ব্যাংক সলভ করা শুরু করি। আমার পড়ার ধরনটা ছিল এমন—ধরুন আমি বাংলা দুইটা গল্প শেষ করেছি তারপরে চেষ্টা করতাম ওই গল্পগুলো থেকে ঢাবিতে কী কী প্রশ্ন এসেছে তা সলভ করার। এভাবে অ্যাডমিশন পর্যন্ত পড়েছি।

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?
আমি কখনোই ভালো ছাত্র ছিলাম না। পিইসি পরীক্ষায় আমার রেজাল্ট ছিল জিপিএ ৪.১৭, জেএসসিতে ৪.৫০, এসসিতে ৪.৭২। রেজাল্ট ভালো না হওয়ায় সবাই আমাকে অবজ্ঞা করত। এসএসসির পর নিজের মনে একটা জেদ নিয়েছিলাম যে সবাইকে দেখিয়ে দিব যে আমার পক্ষেও ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব। যেহেতু রেজাল্ট ভালো ছিল না তাই সবাই চাচ্ছিল আমি যেন গ্রামের কলেজেই পড়ি। কিন্তু আমি সবার কথা অমান্য করে ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেই এবং বিভাগ পরিবর্তন করে সায়েন্স থেকে কমার্সে চলে আসি।

আমি মনে করি আমার এই একটি সিদ্ধান্তই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। নিজের সাথে ওয়াদা করলাম আমাকে এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট এবং ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেই হবে। দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা করে পড়া শুরু করি। আর মনে মনে নিজেকে বুঝিয়েছি, হয়তো আমার রেজাল্ট খারাপ কিন্তু আমি যদি এখন থেকে ভালো করে পড়ি, তাহলে ভর্তি পরীক্ষার নম্বর দিয়ে বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্টের বিষয়টা কভার করে ফেলতে পারব। আমি পরিশ্রম করেছি, আল্লাহ আমাকে পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন। এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাই, পরবর্তীতে ঢাবিসহ আরও ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই।

প্রস্তুতি নিতে গিয়ে কখনো হতাশ হয়েছেন, হলে কাটিয়ে উঠতেন কীভাবে?
হ্যাঁ, প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অনেক সময় হতাশ হয়েছি। আমি কখনোই ভালো ছাত্র ছিলাম না। তাই অনেকবারই মনে হয়েছে যে, অনেক ভালো ছাত্রই তো আছে, তাদের সাথে আমি কীভাবে পারব। তখন আমার ময়ের কান্না মাখা মুখের ছবি আমার মনে পড়ত। এসএসসি পর্যন্ত ভালো রেজাল্ট না করায় আমার মা কান্নাকাটি করত, ভাবত আমি কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাব না। যখন হতাশ লাগত তখন মায়ের কান্না মাখা মুখের কথা মনে করতাম। আর মনে মনে জেদ করতাম আমি মাকে ভুল প্রমাণ করে, মায়ের মুখে হাসি ফোটাব। যেন আমার মা গর্ব করে বলতে পারে যে তার ছেলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভালো পজিশনে চান্স পেয়েছে।

কিন্তু আমি সবসময় পজিটিভ চিন্তা করেছি। আমি নিজেকে বলেছি, হয়তো আমার রেজাল্ট খারাপ কিন্তু আমি যদি এখন ভালো করে পড়ি তাহলে মূল পরীক্ষায় আমি আমার পরীক্ষার মার্ক দিয়ে রেজাল্টের বিষয়টা কভার করে ফেলব। তাই যারা সামনের এডমিশন ক্যান্ডিডেট আছে এবং যাদের রেজাল্ট খারাপ তারা কখনোই রেজাল্ট নিয়ে ভাববেন না। হয়তো আপনাদের রেজাল্ট এখন খারাপ কিন্তু আপনার এখন যদি ভালো করে পড়েন তাহলে অবশ্যই এডমিশনে ভালো করতে পারবেন।

ভবিষ্যতে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিবে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ভবিষ্যতে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান, তাদের উদ্দেশে একটি কথা বলতে চাই—যত আগে আপনি প্রস্তুতি শুরু করবেন, ততই এগিয়ে থাকবেন। অনেকেই ভাবেন, এইচএসসি শেষ করে এডমিশনের পড়া শুরু করবেন। কিন্তু এই চিন্তা একদমই সঠিক নয়।

আপনি এখন ইন্টারমিডিয়েটে থাকলেও, এডমিশনের প্রস্তুতি শুরু করার এটাই সেরা সময়। আপনি হয়তো এখন পর্যন্ত ভালো রেজাল্ট করেছেন বা করেননি—তা বড় বিষয় নয়। অতীত যেমনই হোক না কেন, এখন যদি আপনি পরিশ্রম না করেন, তবে ভবিষ্যতেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাবেন না।

About Toptrendtv

Check Also

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫-১০ জেলা, ৭২ ঘণ্টায় ১৫-২০ জেলায় বন্যার শঙ্কা!

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫-১০ জেলা ও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের ১৫-২০ জেলায় বন্যা হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *